নিউজ সোনারগাঁ টুয়েন্টিফোর ডটকম: সরকারের নিয়মনুযায়ী বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের জম্ম নিবন্ধন বাধ্যতামুলক। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে জম্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও লোকবলসহ সকল নাগরিক সুবিধা দিয়েছেন প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাকে। কিন্তু সেই সেই নিবন্ধন এখন গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার কর্মকর্তাদের অক্ষমতায় উপজেলার প্রতিটি নাগরিক পড়েছে ভোগান্তীতে। যারা নিবন্ধনের কাছে জড়িত সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও খামখেলালিপনায় প্রতিটি জম্ম নিবন্ধনে কিছুনা কিছু ভুল করেছে। যেটার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রতিটি ভুক্তভোগী নাগরিক ও বর্তমানে নিবন্ধন কাছে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যামিকে ২য় বর্ষে উর্ত্তীন হতে প্রতিটির শিক্ষার্থীদের জম্ম নিবন্ধন অনলাইন বাধ্যতামুলক। সেজন্য শিক্ষার্থীদের জম্ম নিবন্ধন কার্ড সংগ্রহ করে সেটা অনলাইনে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে। শিক্ষার্থীরা যখন অনলাইনে তাদের জম্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে দেখেন সেখানে নাম থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই ভুল। আবার অনেকের তাদের ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা ইউনিয়ন থেকে দেয়া জম্ম সনদের সাথে বর্তমানে নাম্বার ছাড়া বাকি কিছুই মিল নেই। সংশ্লিষ্ট সুত্র থেকে জানায় এটা হয়েছে হ্যাকারদের কারনে হ্যাকারা অন্য জায়গা থেকে হ্যাক করে সনদ নাম্বার ঠিক রেখে জম্ম নিবন্ধন অন্য নামে তুলে নিয়েছেন। এসব কারনে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জম্ম সনদ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এতে ভোগান্তীতে পড়েছে সনদে ভুল ও হ্যাক হওয়া নাগরিক ও তার ছেলে মেয়েরা। আবার এ ভুলের সুযোগে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার কর্মকর্তা হাতিয়ে নিচ্ছেন সংশোধনের গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।

ইউনিয়ন ও পৌরসভা সুত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৬ সালে প্রথম জম্ম নিবন্ধন শুরু হয়। সে সময় চুক্তিভিত্তিক কিছু লোক নিয়োগ দিয়ে তারা ইউনিয়ন ও পৌরসভায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে। পরে তারা সেগুলোকে রেজিষ্টারে অর্ন্তভুক্ত করেন। এরপর ২০১২ সালে সরকারের নির্দেশনায় রেজিষ্টারের নাম ঠিকানাগুলো চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগের মাধ্যমে অনলাইনে ডাটা এন্ডি করা হয়। সে সময় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে মাইকিং ও স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নাম ঠিকানা ভুল হয়েছে কিনা তার যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তার ও তাদের বাবা-মাকে অনুরোধ করা হয় কিন্তু তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। এখন বিভিন্ন কাজে জম্ম নিবন্ধন বাধ্যতামুলক করায় জনগনের মধ্যে সচেতনা এসেছে। কিন্তু এখন তাদের সব কিছু অনলাইনে লিপিবদ্ধ করার কারনে অনেক ভুল দেখা যাচ্ছে। কারো নিজের নাম, কারো পিতা-মাতা আবার কারো ঠিকানায় ভুল ধরা পড়ছে। এখন এমনও দেখা যাচ্ছে একজনের ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে দেয়া জম্ম সনদ ঠিকই আছে কিন্তু জম্ম সনদের নাম ঠিকানা কিছুই মিলছেনা। যা আমরা মনে করি হ্যাকারা হ্যাক করে সনদের নাম্বার ঠিক রেখে অন্য নাম ঠিকানা ব্যবহার করে অনলাইন হ্যাক করে জম্ম সনদ তুলে নিয়ে গেছে। তারা আরো জানান, তথ্য সংগ্রহের সময় যদি নাগরিকরা তাদের সাটিফিকেট অনুযায়ী নাম ঠিকানা ও জম্ম তারিখ দিতো তাহলে এতো ভুল হতো না। আবার অনেক সময় যারা অনলাইনে ডাটা এন্টি দিয়েছে তারাও কিছু ভুল করেছে। তবে জম্ম সনদ হ্যাকিংয়ের ব্যাপারে তারা জানান এটা যারা সফটওয়্যার তৈরী করেছে তারা বলতে পারবে কিভাবে অনলাইন হ্যাক করে একজনের সনদ অন্যজন নিয়ে যাচ্ছে। ভুল ও হ্যাকিংয়ের কারণে এখন আমরা ও নাগরিকরা উভয় সংশোধনের ক্ষেত্রে সমস্যা ভোগছি। তবে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিলে আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে লিংঙ্ক করে ভুল হওয়া সনদগুলো সংশোধন করে দিচ্ছি।

জম্ম সনদে ভুল হওয়া পৌরসভার বাসিন্দা ফাহমিদা হক সানাই জানান, আমি একাদশ শ্রেনীতে ২য় বর্ষে উর্ত্তীন হতে গিয়ে জম্ম সনদের অনলাইন করতে গিয়ে দেখি আমার নামের বানান ভুল হয়েছে, এছাড়া আমার মায়ের সনদের নাম্বার ঠিক আছে কিন্তু নীলফামারীর এক মহিলার নামে চলে গেছে আবার আমার বাবার নামেও ভুল। পরে আমি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে তা সংশোধন করি।

পৌরসভা এলাকার বালুয়াদিঘিরপাড় এলাকার এক শিক্ষার্থী জানান, আমার জম্ম সনদ অনলাইন করতে গিয়ে দেখি আমার সনদে মুন্সিগঞ্জের এক ব্যক্তির নাম উঠে আছে। আমি তখন পৌরসভায় যোগাযোগ করি। তখন তারা আমাকে জানায় এটা হ্যাকাররা হ্যাক করে আমার সনদের নাম্বার ঠিক রেখে নাম ঠিকানা পরিবর্তন করে সনদ নিয়ে গেছে। এখন আমি একাদশ শ্রেনীর ২য় বর্ষের উর্ত্তীন হতে অনলাইন করতে পারছিনা। পৌরসভা গেলে সচিব ও অন্যান্যরা বলেন, আজ না কাল এভাবে করতে করতে ১মাস অতিবাহিত করেছে। এখন বলে মন্ত্রনালয় থেকে ঠিক করতে হবে। এমতাবস্থায় আমি মহা বিপদে আছি। শিক্ষার্থীর বাবা রোকন জানান, জম্ম নিবন্ধনে ভুল করেছে পৌরসভা, সেটার খেসারত আমাদের কেন দিতে হবে। হ্যাক যদি হয় সেটা উদ্ধার করার দায়িত্ব তাদের আমি মন্ত্রনালয়ে যাবো কেন ?

পিরোজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও শিক্ষার্থী জান্নাত জানান, আমার জম্ম নিবন্ধনে ভুল এসেছে। আমি সংশোধনের জন্য ২ সপ্তাহ ধরে ঘুরছি। তথ্য সেবায় যিনি আছেন তার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তিনি রেগে যান। এখন আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিনা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইউনিয়ন পরিষদের এক সচিব জানান, জম্ম নিবন্ধনে ভুলের প্রধান কারণ হচ্ছে তারা তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং যারা তথ্য দিয়েছেন উভয়ই। আবার তথ্য সংগ্রহের সময় নামের বানানও ভুল করেছে অনেকে। পরে যারা অনলাইনে কাজ করেছে তারা কোন মতে প্রশিক্ষন নিয়ে অনলাইনে ডাটাগুলো এন্ডি দিতে গিয়ে অসাবধানতা বসত অনেক ভুল করেছে। সেজন্য আজ সাবাইকে এই ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জম্ম নিবন্ধনে কোন ভুল হলে তা সহজেই সংশোধন করা যায়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র জমা দিলে তারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আমরা কাগজপত্র পেলে সংশোধনের আনুমোদন করে দেই।